পালিত হল ঐতিহাসিক পানিহাটি ৫০৫ বছর দন্ড মহোৎসব বা চিড়ার মেলা :

ঐতিহ্য ঐতিহাসিক পীঠস্থান মহোৎসব তলা ঘাট পানিহাটি l আজ পালিত হল ৫০৫ তম দন্ড মহোৎসব l ইতিহাসে কথিত আছে হুগলির রাজার ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী চৈতন্য নিত্যানন্দ কাছ থেকে দীক্ষা নেবেন সেই দীক্ষা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়ে ছিলেন চৈতন্য অথবা নিত্যানন্দের খোঁজে l

 এক সময় খোঁজ পান চৈতন্য নীলাচলে রয়েছেন যা আজ পুরী l সেখানে রঘুনাথ দাস গোস্বামী চৈতন্যের সাথে দেখা করতে যান দীক্ষা নেবেন বলে কিন্তু তাকে দেখেই চৈতন্য বলেন তোর দীক্ষা দেওয়া যাবে না l তখন তিনি বলেন কেন মহাপ্রভু সেই সময় চৈতন্য বলেন নিত্যানন্দ সাথে দেখা না করে চৈতন্যের সাথে দেখা হয় না l নিত্যানন্দ ছাড়া চৈতন্য নয় আবার চৈতন্য ছাড়া নিত্যানন্দ নয় l তখন তিনি বলেন নিত্যানন্দ কে কোথায় পাবো সেই সময় তিনি বলেন নিত্যানন্দ কে পেতে হলে পানিহাটিতে তোকে যেতে হবে l 
সেই সময় হিন্দু ধর্মের মধ্যে লড়াই চলছিল l অনেক হিন্দু ধর্ম ছেড়ে বহু মানুষ বিভিন্ন ধর্মে চলে যাচ্ছিলেন l সেই হিন্দু ধর্মের প্রচারে উনি বেরিয়েছিলেন l বিভিন্ন জায়গায় নগরকীর্তন করে বেড়াতে সেই নগর কীর্তন এবং হিন্দু ধর্মের প্রচার এসেছিলেন নিত্যানন্দ এই পানিহাটির মহোৎসব তলা ঘাটে l সেখানেই হুগলির রাজার ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী আসেন l


 নিত্যানন্দ তাকে বলেন তুই একটা বড় অন্যায় করেছিস l নিত্যানন্দের সাথে দেখা না করে চৈতন্যের সাথে দেখা করার জন্য l সে কারণেই তোকে শাস্তি পেতে হবে l আজকের দিনের শাস্তি আর সেই সময় শাস্তি কে বলা হত দন্ড l নিত্যানন্দ রঘুনাথ দাস গোস্বামী কে দন্ড দেন যে শুক্ল পঞ্চমী পূর্ণিমা তিথিতে ছিল সেই দিনটি l এখানে যে সমস্ত ভক্তবৃন্দ আসেন নগর কীর্তন এবং তার সাথে দেখা করতে কথা বলতে হিন্দু ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে তাদেরকে খাওয়াতে হবে l সেই সময় রঘুনাথ দাস গোস্বামী সেই দণ্ড মাথা পেতে নিয়ে তার ব্যবস্থা করেন l আষাঢ় মাসের এই শুক্লা পঞ্চমী পূর্ণিমা সেই সময় যে ফল ওঠে ফল কাটাল আম জাম চিড়া খই দই  মুড়কি সহ ফলাদি দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেন l কিন্তু সে সময় রাজা সমস্যায় পড়ে যায় l দেবেন কিসে করে l এই ভক্তদের তখন পাশেই পালপাড়া রয়েছে l পানিহাটিতে সেই পালপাড়া তে যান l পালপাড়া তে তখন তৈরি হচ্ছিল কলসি কুঁজো l সেই কলসি এবং পুজো তৈরি হয় দুটো পাটে l নিচের দিকটা আগে তৈরি হয় এবং উপরের দিকটা আলাদা l এই দুটোকে একসাথে মিলানো পড়ে তৈরি হয় কলসি বা কুঁজো l সেই নিচের অংশটা নিয়ে আসেন l তাতে করে ভক্ত বৃন্দকে ফল খই মুড়কি চিরে দেওয়া হয় l সেই পাত্রকে ছড়া বলা হয় l সেই দন্ড মহোৎসব এ বছর পদার্পণ করল  ৫০৫ বছর l  কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপে অনেকটাই জাঁকজমক বিহীনভাবে দু'বছর এই উৎসব পালিত হলো l লকডাউন চলার ফলে যে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হতেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে কিন্তু এ বছর এবং গত বছর সেই ভক্ত বৃন্দ উপস্থিত হতে পারল না l

 শুধুই মহামারী কোরনার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কোরনা ভাইরাস এর সরকারি নিয়ম বিধি মেনে এবছর দন্ড মহোৎসব পালন করা হলো l ছিলনা মেলা দেখা মিলল না সেই অজস্র ভক্তের দলের তার মধ্যে কিছু কিছু ভক্ত যারা কাছাকাছি থাকে যাদের আসা-যাওয়া সুবিধা আছে তারা এসে পুজো দিয়ে গেলেন l এবং মন্দিরে নিয়ম রক্ষার্থে নিয়ম মেনে পুজো করা হলো এবং আজকের তিথি পালন করা হলো l৫০৫ বছরে পদার্পণ করল এবছর পানিহাটি ঐতিহ্যপূর্ণ ঐতিহাসিক দন্ড মহোৎসব যা আজ চিড়ার মেলা নামে বিখ্যাত হয়েছে l 
দু'বছর করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ফলে লকডাউন চলায় অনেকটাই ভাটা পড়ল l এবছর এই দন্ড মহোৎসব এর এই মেলায় উপস্থিত ছিলেন পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক এবং বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ ও পানিহাটি পৌরসভার পৌর প্রশাসক মলয় রায় সহ পানিহাটি পৌরসভা বিভিন্ন কো-অর্ডিনেটর l স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজকের এই পুজো এবং এই মহোৎসব পালন করা হয় কিন্তু চোখে পড়ল না কেমন ভাবে ভক্তের সংখ্যা l এই উৎসবে পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ তিনি মহোৎসব ঘাটে শ্রী প্রভু পায়ে পুজো দেয় এবং পানিহাটি মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করেন l

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

**বসন্ত রঙে মেতে উঠল বেলঘড়িয়া নিউ বাসুদেবপুর রোড অধিবাসী**

পূর্ব কলকাতায় গাঙ্গোর মহোৎসব উদযাপন :

*নাদের পরিচালনায় আয়োজিত হলো "সার্বজনীন রবীন্দ্রনাথ" নামে অনুষ্ঠান **