*বাঙালি শিশুদের বইতে চলছে ভুল ও অসাংবিধানিক প্রচার; প্রতিবাদে সরব 'ঐক্য বাংলা'*


 দাবি করেন যে ' হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা '। অথচ এটি কেবলই একটি 'মিথ' , ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সৌজন্যে এই তথ্যটি ফের একবার সাধারণ বাঙালির সামনে চলে এসেছে। 

তবে নজিরবিহীন ভাবে ' হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা ' দাবি করা একটি প্রকাশনী সংস্থার অফিসে অভিযান করে স্মারকলিপি প্রদান করল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ঐক্য বাংলা'। 

ঠিক কি কারণে স্মারকলিপি প্রদান করল 'ঐক্য বাংলা' ? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , " কয়েকদিন আগেই সামাজিক মাধ্যমে আমরা জানতে পারি 'হোলি চাইল্ড পাবলিকেশন' নামক একটি প্রকাশনী সংস্থা তাদের প্রকাশিত একটি সাধারণ জ্ঞানের বইতে প্রচার করে যে 'হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা'। কিন্তু এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল ও অসাংবিধানিক। ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। উপরন্তু এটা এমন একটা ভুল যেটা বাঙালি শিশুদের নিজেদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ভাবতে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দেবে। সুতরাং এই শিশুমনের পক্ষে ক্ষতিকারক ভুল যাতে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশোধন করেন  সেই দাবি জানিয়ে তাঁদের অফিসে স্মারকলিপি প্রদান করি আমরা।" 

এছাড়া আর কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে 'ঐক্য বাংলা' ?


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম নেতা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন, " সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টা তুলে ধরে আমরা এই প্রকাশনী সংস্থার ভুল ও অসাংবিধানিক তথ্য পরিবেশনের নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে আমরা এই বিষয়ে জনমত গঠন করার চেষ্টা করি যাতে সাধারণ বাঙালি এই বিষয়ে সচেতন হতে পারে, কারণেই ক্ষতিকারক ভুল তথ্য অনেক বাঙালি ই সঠিক মনে করেন। এর পরে 'ঐক্য বাংলা'র সদস্যরা এই প্রকাশনী সংস্থাকে চিঠি পাঠাই। তারা কোনো উত্তর না পাওয়ায় শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন আমাদের ঐক্যযোদ্ধারা।" 

কি বলছেন প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধিরা?

এই প্রসঙ্গে 'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা সৌম্য চৌধুরী জানান , " আমরা খুব স্পষ্টভাবে 'হোলি চাইল্ড পাবলিকেশন' নামক এই প্রকাশনী সংস্থাকে তাঁদের বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে জানাই যে এইভাবে তারা একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাতে পারেননা, তাঁরা যেন অবিলম্বে এই ভুলটা সংশোধন করেন। আমরা আনন্দিত যে প্রকাশনী সংস্থার আধিকারিকরা তাঁদের ভুলটি স্বীকার করে নিয়ে আশ্বাস দেন যে তারা তাদের সেই বইয়ের পরের সংস্করণে এই ভুলটি শুধরে নেবেন। " 

তবে এই প্রসঙ্গে এইদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত 'ঐক্য বাংলা'র আর একজন তরুণ সদস্য ইস্তাক আলী লস্কর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক তুলে ধরেন। 
তিনি বলেন , " এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বই বিক্রি না হলে প্রকাশনী সংস্থা নিশ্চয়ই এই বইটির নতুন সংস্করণ প্রকাশ করবে না। সুতরাং ততদিন অবধি যে হাজার হাজার বাঙালি শিশু ভুল ও অসাংবিধানিক তথ্য জেনে বড় হল, তাঁর দায়ভার কে নেবে ? " 

হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ঐক্য বাংলা সংগঠনের আর একজন তরুণ তুর্কি রৌনক গুঁই। তিনি বলেন, " হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা নয়, ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। ভারত বহুভাষিক একটি যুক্তরাষ্ট্র। কোনোভাবেই জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী একটি ভাষা, আগামী দিনেও যাতে এই ভাষার অস্তিত্ব বজায় থাকে সেটাও আমাদের আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য।" 

কার্যতঃ একই সুর ফুটে উঠল 'ঐক্য বাংলা'র সদস্য উত্তরণ পাঠকের গলায়, " এই মাটি রবীন্দ্রনাথের মাটি, এই মাটি নজরুলের মাটি। তাঁরা বিবিধের মাঝে মিলনের পবিত্র আদর্শের বিষয়ে বলে গিয়েছেন। সুতরাং তাঁদের আদর্শ, তাঁদের ভাষাকে পরিত্যাগ করে অন্য কোনো জাতির, অন্য কোনো রাজ্যের ভাষা গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজনই নেই।" 


এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ঐক্য বাংলা সংগঠনের সমর্থক পার্থ রায়ের অবশ্য এর পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন। তাঁর মতে , " কেন্দ্রে যে দলই ক্ষমতায় থেকেছে তারাই বাংলা বিরোধী ও বাঙালি বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্যেই তারা বারবার হিন্দি চাপাতে চেয়েছে যাতে বাঙালি নিজের ভাষা ভুলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।" 

ঐক্য বাংলার তরুণ সদস্য দেবায়ন সিংহ তুলে ধরেন একটি অন্যতম সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দিক - বাঙালির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। তিনি বলেন , "আমাদের কাছে বাঙালির স্বার্থ, তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সব থেকে আগে। এবং আমি মনে করি সব বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন এর এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত।  কোন কোন বাংলাবাদি সংগঠন তথাকথিত বাঙালির দাবি আদায়ে করতে গিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির শাটার নামিয়ে দিচ্ছে। যদি তাদের কারণে ওই সংস্থায় কর্মরত কোনো বাঙালি ব্যক্তির বেতন কাটা যায় তার দায় কি ওই 'বাংলাবাদী' সংগঠন নেবে ?" 

তিনি স্পষ্টত জানান, " গুন্ডামি, মারপিট করার লক্ষ্য 'ঐক্য বাংলা'র নেই। আমরা বাংলার ভূমিসন্তানদের জন্য নিয়োজিত হয়েছি, কোনোরকম লোক দেখানো স্টান্টবাজিতে আমরা বিশ্বাস করি না"। 

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যেভাবে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে সাফল্য লাভ করেছে এক বছরের ও কম বয়সী এই মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠনটি , তাতে তাঁরা অনেকের কাছেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। এখন দেখার তারা ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয় কি না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

**বসন্ত রঙে মেতে উঠল বেলঘড়িয়া নিউ বাসুদেবপুর রোড অধিবাসী**

পূর্ব কলকাতায় গাঙ্গোর মহোৎসব উদযাপন :

**বাংলার সন্মান বেঙ্গল এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড ২০২০**