বাংলায় পরিষেবা প্রদানের দাবিতে Rapido অফিস অভিযান 'ঐক্য বাংলা'র **
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : রাপিডো জনপ্রিয় একটি অ্যাপ ভিত্তিক বাইক পরিষেবা সংস্থা। কিন্তু অনেক সর্বভারতীয় বেসরকারি কোম্পানীর মতই, রেপিডো রাখেনি বাংলায় পরিষেবা পাবার সুযোগ। রেপিডো বাইক চালকরা খোদ রাজধানী কলকাতা র বুকে বাংলায় কথা বলতে অস্বীকার করছেন এবং বাংলায় পরিষেবা চাইলে রাইড ক্যানসেল করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এবার তাদের বাংলার মূল অফিসে স্মারকলিপি প্রদান করল 'ঐক্য বাংলা'।
কেন এই স্মারকলিপি প্রদান করা হল ?
উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , " পশ্চিমবঙ্গের বুকে কোনো ব্যবসায়ীক সংস্থা যদি ব্যবসা করে তাদের নৈতিক কর্তব্য হল সেই রাজ্যের মাতৃভাষায় পরিষেবা প্রদান করা। অথচ এই রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও রেপিডো সহ একাধিক সংস্থা যেভাবে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য রেখে , বাঙালিকে অন্য ভাষায় পরিষেবা প্রদান করছে ও বিভিন্নভাবে বাঙালিকে অপমান করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই রেপিডোর মূল অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি আমরা। "
এসব অভিযোগের ভিত্তি কি ?
ঐক্য বাংলার অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য ঐক্যযোদ্ধা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন , " রেপিডো সহ বিভিন্ন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করে রেখেছে। তবে একটি বিশেষ ঘটনা আমাদের নজরে আসার পড়ে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। "
অভিজিৎ বাবু বিশদে জানান , " গত ১৭ই অক্টোবর গভীর রাতে একজন বাঙালি গ্ৰাহকের রাইড কোনো ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়াই বাতিল করে দেয় রেপিডো কর্তৃপক্ষ। কিছুক্ষণ পর তাঁদের একজন হিন্দিভাষী কাস্টমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভ সেই বাঙালি গ্ৰাহককে বলেন যে রাইডের সম্পূর্ণ খুঁটিনাটি তথ্য যেন তিনি হিন্দি অথবা ইংরেজিতে দেন, মাঝখানে তিনি যেন তাঁর মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা ব্যবহার না করেন। বাংলার বুকে একটি সংস্থা ব্যবসা করবে , বাঙালির অর্থে তাঁদের রুজি রোজগার হবে অথচ তাঁরা এইভাবে বাঙালিকে অপমান করবে সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।"
ঐক্য বাংলার এ সংক্রান্ত নেওয়া অন্যান্য পদক্ষেপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সৌম্য চৌধুরী জানান , " আমরা প্রথমেই বিষয়টি নিয়ে একটি সঙ্ঘবদ্ধ ইমেইল ক্যাম্পেইন করি। বিষয়টি আমাদের সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদও জানাই ও রেপিডোর হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী স্বরূপটি বাংলার ভূমিসন্তানদের কাছে তুলে ধরেছিলাম। এছাড়াও আমাদের সামাজিক মাধ্যমে বাংলা ভাষায় তারা যাতে পরিষেবা প্রদান করে সেই বিষয়ে জনমত গঠন করার পাশপাশি আমরা তাদের এই আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের গুগল প্লে স্টোর এ যথোপযুক্ত রেটিং দেবার আহ্বান জানিয়েছিলাম। "
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কতটুকু সফল 'ঐক্য বাংলা' ?
উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র তরুণ সদস্য দেবায়ন সিংহ বলেন , " ঐক্য বাংলার তরফ থেকে যে মেইল করা হয়েছিল রেপিডো কর্তৃপক্ষ তার উত্তর বাংলায় দিয়েছেন। তারা আমাদের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন এবং জানিয়েছেন বাংলা সহ অন্যান্য অহিন্দি ভাষায় শীঘ্রই পরিষেবা চালু করার কাজ তারা শুরু করেছেন।এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং আমাদের ইমেইল ক্যাম্পেইনের একটা সাফল্য হিসেবে আমরা দেখছি। এছাড়াও আমাদের কিছু কিছু সমর্থকরা যারা মেইল পাঠিয়েছিলেন তাদেরও রেপিডো ব্যক্তিগতভাবে মেইল করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের স্মারকলিপি ও গ্ৰহণ করেছে রেপিডো কর্তৃপক্ষ। সুতরাং বলাই যায় তারা অন্তত এই ইস্যুতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এই কারণেই এটা আমাদের সাফল্য। "
তবে এই প্রসঙ্গে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করলেন 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত।
উনি বলেন , " রেপিডোর কলকাতার অফিসে স্মারকলিপি প্রদানের পর একটা বিষয় উঠে আসছে যা খুবই উদ্বেগজনক। কলকাতার অফিসে রেপিডো কর্তৃপক্ষ কিন্তু কোনো আশ্বাস দিতে পারেনি কবে তাঁরা বাংলা ভাষায় পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হবেন বা কবে তারা তাদের মূল অ্যাপে বাংলা ভাষা আনতে পারবেন। তার একটাই কারণ - কলকাতায় অবস্থিত রেপিডো অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কার্যতঃ কোনো ক্ষমতাই নেই। যাবতীয় ক্ষমতা রয়েছে তাদের হেডকোয়ার্টার বেঙ্গালুরুতে। যদিও রেপিডোর কলকাতা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক একজন অবাঙালী , এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে একজন বাঙালি থাকলেও এই সমস্যার সুরাহা হত - কারণ সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ ও কার্যকর করার ক্ষমতা বাংলার অফিসের কাছে নেই। বাংলায় কোম্পানির ব্যবসায়িক নীতি বা স্ট্র্যাটেজি কি হবে সেটা নির্ধারিত হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে বাংলার বাইরে বাংলার সাথে সম্পর্করহিত, এবং অবশ্যই অবাঙালি, কর্মকর্তাদের দ্বারা - এটা প্রায় যেকোন বেসরকারি কোম্পানির বাস্তব চিত্র। বাঙালি কিভাবে ভারতের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিগত কয়েক দশক ধরে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হচ্ছে এটা তারই আরেকটা নিদর্শন।"
কার্যতঃ একই সুরে এদিনের স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিতে উপস্থিত 'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম নবীন সদস্য উত্তরণ পাঠক ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন , " স্বাধীনতার পর থেকেই একের পর এক বাংলা বিরোধী চক্রান্ত হয়ে চলেছে। ব্যাঙ্ক , অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান , কয়লা ফ্যাক্টরি , সরকারি বেসরকারি সংস্থার একাধিক হেড অফিস হয় বাংলার বাইরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নয়তো সেগুলোকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে।এর ফলে আমাদের বাঙালি ভাই বোনেদের কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে, এটা আমাদের বুঝতে হবে। তাই যতটা সম্ভব বাঙালির থেকে কিনতে হবে , বাঙালিকে কাজে নিয়োগ করতে হবে। "
আশা করা যায় বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা সহ সমগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে, ক্রেতা- কর্মী-শিক্ষার্থী তথা নাগরিক হিসেবে বাঙালিকে ব্রাত্য করে রাখার সর্বভারতীয় সংস্কৃতি অদূর ভবিষ্যতে একটু হলেও পিছু হঠবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন