দেশীয় তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে আধুনিক তাঁত শিল্পের লড়াই :
পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড় অঞ্চল তাঁত শিল্পের উপর বিখ্যাত l এখানে বাড়িতে বাড়িতে তাঁতের শাড়ি তৈরি হয় l এখানকার মানুষ তাঁত শিল্পের উপর এই নির্ভর l এখান থেকেই আমাদের পশ্চিমবাংলা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁতের শাড়ি পাঠানো হয় l আসাম, ত্রিপুরা দক্ষিণ ভারত সহ বিভিন্ন রাজ্যে l এখানে মূলত তাঁতের শাড়ি যেটি তৈরি হয় সেটি হল তাঁত জামদানি l
এই জামদানি শারী তে আবার তিন রকমের তৈরি হয় একটি সম্পূর্ণ সুতির দ্বিতীয় টি সুতি এবং সিনথেটিকের সুতোর সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং তৃতীয় টি সম্পূর্ণ তৈরি হয় সিন্থেটিক সুতোর দ্বারা l এই সিন্থেটিক সুতো দ্বারা নির্মিত তাঁত জামদানি অনেক বেশি গ্লেজি হয় কিন্তু সম্পূর্ণ তুলোর সুতো দিয়ে তৈরি সেই জামদানি টি অতটা গ্লেজি হয় না l এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা অনুযায়ী হাতে বোনা তাতে একটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে দেড় দিন কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এবং চীনের থেকে আমদানি করা মেশিনে সেই জামদানি শাড়ি তৈরি করতে বা তাঁতের শাড়ি তৈরি করতে খুব কম সময় লাগে l কিন্তু উৎপাদন অনেক বেশি হয় l একটি মেশিন খুব উন্নত মানের মেশিনে প্রতিদিন উৎপাদন হয় কুড়ি থেকে পঁচিশটি শাড়ি এবং এর পাশাপাশি চীনের তৈরি মেশিন ছোট আকারে তার উৎপাদন সংখ্যা প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটা l
এবং হাতে তৈরি করতে গেলে তাঁতিদের সময় লাগে একটি শাড়ি তৈরি করতে দেড় থেকে দুই দিন তারি পাশাপাশি অত্যাধুনিক মেশিন যেখানে উৎপাদন সংখ্যা অনেক বেশি তার ফলে এই অঞ্চলে যে সমস্ত মানুষেরা একটু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী তারা এক এক করে অত্যাধুনিক মেশিন বসানো শুরু করেছে l তার ফলে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়ছে যে বেকারত্ব হওয়ার l একটি তাতে মিশিয়ে যে শাড়ি তৈরি করতে যে লোকের সংখ্যা দরকার হয় তার থেকে কম সংখ্যায় মানুষের কম পরিশ্রমে অনেক বেশি উৎপাদন করা যাবে l যার ফলে আগামী দিনে এই অঞ্চলে মানুষের মধ্যে কর্মসংস্থানের এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সংকটের মুখে পড়তে হবে বিরাট অংশের মানুষ কে l নাহলে এই প্রতিযোগিতার দিনে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা কারণ এই অঞ্চলের মানুষ এই তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল l
সরকারের পক্ষ থেকে সেই ভাবে সাহায্য পাচ্ছে না এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা l এই কাজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের অভিযোগ এখানে দুর্নীতি হচ্ছে রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান তন্তুজ তন্তুজ শ্রী মঞ্জুষা গ্রামীণ শাড়ি উদ্যোগ খাদি উদ্যোগ ভবন l এরা যেভাবে এখান থেকে শাড়ি কিনছে তাতে দুর্নীতি চলছে l সরাসরি যদি তাঁতিদের কাছ থেকে কাপড় কিন্তু তাহলে অনেক বেশি পরিমাণে এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা উপকৃত হতে পারত l সরকারের পক্ষ থেকে যে তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে l তা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের কাছে পর্যন্ত পৌঁছয়নি l সেখানেও সরকারি দলের বিধায়ক এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির কথা উঠে আসলো এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের কাছ থেকে l
তারা অভিযোগ করছে সরকার যে লোন দিচ্ছে সমবায়ের মাধ্যমে তা যখন নিতে যাওয়া হচ্ছে তখন তাদের কাছ থেকে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু তারা আর সেই সই করা মানুষেরা লোন পাচ্ছে না l তন্তুজ বা তন্তু শ্রী অথবা মঞ্জুসার কাপড় কেনার জন্য ঘটা করে তাঁতের হাট নামে অনুষ্ঠান করে নিজস্ব পেটুয়া লোকদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হচ্ছে l তাও বেশি দামে l যারা অঞ্চলের রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পছন্দ মতন লোকের কাছ থেকে দুর্নীতি করা হচ্ছে l
তাই তাঁত শিল্পের শ্রমিকদের বা তাঁতিদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হচ্ছে সরকার পক্ষের মানুষ সরাসরি আমাদের কাছে আসুক আমাদের কাছ থেকে দর দান করে শাড়ি কিনে তাতে সরকার পক্ষ উপকৃত হবে এবং আমরা উপকৃত হব l
শুধু বিজ্ঞাপন নয় কাজে সরকার পক্ষ করে দেখাক তবে আগামী দিনে আমরা এই অঞ্চলের মানুষ তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব এবং এই তাঁত শিল্পের উপরে যেহেতু এই অঞ্চলের মানুষ নির্ভর এবং বড় একটা অংশের মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে ও তার সাথে সাথে যে হারে বেকারত্ব বাড়ছে এবং করোনা ভাইরাস ফলে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তা অনেকটাই রক্ষা করা যাবে l সরকারের উচিত সরাসরি এই তাঁতিদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা l
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন