রবীন্দ্র সরোবরের দূষণমুক্তি কি সম্ভব ? চিরস্থায়ী সমাধানের দিকে এগোচ্ছে 'ঐক্য বাংলা'*
নিজস্ব সংবাদদাতা , কলকাতা : গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে আইন অমান্য করে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো পালন করা হয়েছিল তাতে রীতিমত বিক্ষুব্ধ হয়েছিল সাধারণ মানুষ থেকে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। এই তালিকায় রয়েছে কিছু বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠনও।
এই বছর পরিবেশ আদালত তাদের রায়ে জানিয়ে দেয় রবীন্দ্র সরোবরে ছট সহ কোনো ধর্মীয় উৎসবই পালন করা যাবে না। এই রায়ের বিরুদ্ধে KMDA হাইকোর্টে আবেদন করলেও সেখানেও একই রায় বহাল রাখা হয় ।
অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করলেও এই বিষয়ে চূড়ান্ত রায় বেরোবে ২৩ই নভেম্বর।
সুতরাং হাইকোর্টের রায় বজায় থাকছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কি রায় ঠিকঠাক ভাবে পালন করা হবে ?
গত দুই বছরের মত পুনরাবৃত্তি হবে না তো ?
ঐক্য বাংলার সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , " আমরা আশা করি প্রশাসন হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দেবে এবং রবীন্দ্র সরোবরে এই বছর ছট পুজো হবে না।"
'ঐক্য বাংলা'র দাবি বছরের পর বছর যেভাবে রবীন্দ্র সরোবরে দূষণ হয়ে চলেছে সেটার একটা চিরস্থায়ী সমাধান খুব শীঘ্রই হবে।
জানা গিয়েছে যে সামাজিক মাধ্যমে ও পথে নেমে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে ইতিমধ্যেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এই মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠনটি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানালেন , " আমরা প্রথম থেকেই এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে জনমত গঠন করছি। সাধারণ বাঙালি আমাদের বিপুল পরিমাণে সমর্থন করেছেন। যে সকল বাঙালি রবীন্দ্র সরোবরে ছটের বিরোধিতা করেছেন একটি বয়ানের নীচে তাদের সকলের সই আমরা সংগ্ৰহ করে আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। এছাড়াও এই সমস্ত সই আগামী দিনে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাজে লাগবে ।"
সুলগ্না দেবী আরো যোগ করেন , " আমরা টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি , প্রশাসনিক দপ্তরকে উদ্দেশ্য করে আবেদন করেছি যে এই বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো না হয়। আমরা আশা করি সকলেই এতে সাড়া দেবেন। "
পথে নেমে কি কি কর্মসূচি গ্রহণ করল 'ঐক্য বাংলা' ?
সংগঠনের নেতৃস্থানীয় সদস্য অভিজিৎ গুহ নিয়োগী জানালেন , " সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন অঞ্চলে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করেছি । আগামী দিনে নির্দিষ্ট জায়গায় আমাদের পোস্টারিং কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবনেও আমরা লিখিত আকারে আবেদন জানাব। এবং অবশ্যই ছটের দিনও আমাদের বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে , সেটাও আপনারা যথাসময়ে জানতে পারবেন। "
'ঐক্য বাংলা'র তরুণ সদস্য অবশ্য অন্য একটি তথাকথিত বাংলাবাদী সংগঠনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
তিনি ব্যঙ্গের সুরে বললেন , " হঠাৎ করে ছটের কিছু দিন আগে কিছু সংগঠনের ঘুম ভেঙেছে। তাই তাদের বিভিন্ন জায়গায় দৌড়োতে হচ্ছে। লোক দেখানো একটি জায়গায় স্মারকলিপি প্রদান করে নিজেদের প্রচার হয় , কাজের কাজ কিছুই হয় না। 'ঐক্য বাংলা' যথাসময়ে সঠিক জায়গায় উপযুক্ত দপ্তরে আবেদন জানাবে , আমরা লোক দেখানো , মেকি প্রতিবাদে বিশ্বাসী নই।"
তবে অনেক ক্ষেত্রেই 'ঐক্য বাংলা'কে ছটকে কেন্দ্র করে
'হিন্দু বিরোধী' তকমা দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে 'ঐক্য বাংলা'র অবস্থান স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করলেন সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সৌম্য চৌধুরী।
তিনি বললেন , " আমরা একেবারেই ছট বিরোধী নই। আমরা আইনকে সম্মান দিয়ে শুধু আবেদন জানাচ্ছি যে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে রবীন্দ্র সরোবরে যাতে ছট পুজো না হয় সেটা শুধু সুনিশ্চিত করা হোক। তাছাড়া প্রশাসন তো বিভিন্ন জায়গায় ছটের জন্য আলাদা করে পুকুর তৈরি করেছেই , প্রশাসন সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে , সেখানে ছট হোক আমাদের সমস্যা নেই।"
তিনি আরো যোগ করলেন , " দিল্লি - ঝাড়খন্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় ছটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানকার স্থানীয় সরকার। সেখানে কিন্তু কোথাও কাউকে 'হিন্দু বিরোধী' তকমা দেওয়া হয়নি , আমরা রবীন্দ্র সরোবরে ছট না হওয়ার আবেদন জানানোয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে আমাদের 'হিন্দু বিরোধী' তকমা দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি সচেতন জাতি , তাঁরা সবটাই বুঝতে পারছেন।"
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যেভাবে একের পর এক অভিনব তথা কার্যকরী কর্মসূচির মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করেছে মাত্র নয় মাস বয়সী বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন , তাতে আশা করাই যায় তারা ঘর গুছিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে এই বছর যদি রবীন্দ্র সরোবরে ছট না হয় , তাঁর সিংহভাগ কৃতিত্বের ন্যায্য দাবিদার যদি 'ঐক্য বাংলা' দাবি করে , সেটা বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হবে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন